⚖️ জমি জমার বিরোধ নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আইনী পদক্ষেপ সমূহ কি কি?

  • Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
  • Published: 3 weeks ago
  • Category: ফৌজদারী কার্যবিধি
জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদের মূল প্রশ্ন দখলকে ঘিরে। প্রত্যেক পক্ষই জমির ভোগ দখল করে আসছে বলে দাবী করে। এ দখলকে কেন্দ্র করে দাংগা হাঙ্গামার দেখা দেয়। এই মারামারির বিরুদ্ধে আশু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধানাবলী ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় বিধৃত হয়েছে। 

 

লিখিত বক্তব্য পেশের আদেশঃ   

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, যদি কোনো মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ প্রতিবেদন বা অন্য কোনোরূপ সংবাদের ভিত্তিতে এ মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, তাদের অধিক্ষেত্রের মধ্যে জমি বা পানি বা উহার সীমানা সম্পর্কে এমন একটি বিরোধ রয়েছে যা শান্তি ভঙ্গের কারণ ঘটাতে পারে তখন তিনি সন্তুষ্টির কারণ উল্লেখ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে ব্যক্তিগতভাবে বা আইনজীবির মাধ্যমে আদালতে হাজির হয়ে বিরোধীয় বিষয় বস্তুতে প্রকৃত দখল সম্পর্কে তাদের স্ব স্ব দাবী সম্পর্কে লিখিত বক্তব্য পেশ করার একটি লিখিত আদেশ দিবেন। 

 

জমি বা পানির অর্থঃ 

এ ধারায় জমি বা পানি বলতে দালান, বাজার, মৎস্য খামার, ফসল বা জমিতে উৎপন্ন অন্যান্য দ্রব্য এবং এরূপ কোনো সম্পত্তির খাজনা বা লভ্যাংশকেও বুঝাবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(২) ধারা)।

 

আদেশ জারীর পদ্ধতিঃ  

আদেশের একটি কপি পক্ষগণের উপর সমন জারীর পদ্ধতিতে জারী করতে হবে এবং আরেকটি কপি বিরোধীয় বিষয় বস্তুতে বা উহার সন্নিকটে কোনো প্রকাশ্য স্থানে জারী করতে হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(৩) ধারা)।

 

দখল সম্পর্কে তদন্তঃ 

অতঃপর ম্যাজিষ্ট্রেট বিরোধীয় বিষয় বস্তুতে পক্ষগণের কারও দখলের দাবী প্রসংগে না যেয়ে পক্ষগণ কর্তৃক দাখিলকৃত বিবৃতি সমূহ দেখবেন, পক্ষগণের বক্তব্য শ্রবণ করবেন, পক্ষগণের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন, এরূপ সাক্ষ্য প্রমাণের ফলাফল বিবেচনা করবেন এবং সম্ভব হলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(১) ধারার উল্লিখিত আদেশের তারিখে কোন পক্ষ বিরোধীয় বিষয় বস্তুতে দখলদার ছিলেন তা স্থির করবেন। তবে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত আদেশের তারিখের অব্যাবহিত পূর্ববর্তী দুই মাসের মধ্যে কোনো পক্ষকে জোরপূর্বক ও অন্যায়ভাবে বেদখল করা হয়েছে তাহলে তিনি এরূপ দখলচ্যুত পক্ষকে উক্ত তারিখে দখলকার ছিলেন বলে গণ্য করতে পারবেন। ম্যাজিষ্ট্রেট যদি বিষয়টিকে জরুরী বলে বিবেচনা করেন তবে বিরোধীয় বিষয় বস্তুটি ক্রোক করতে পারবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(৪) ধারা)।

 

পূর্বের আদেশ বাতিল করে নতুন আদেশ প্রদানঃ 

এই ধারায় নির্দেশিত পক্ষগণ প্রমাণ করতে পারবেন যে, কোনো বিরোধের অস্তিত্ব ছিলো না। এক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট তার পূর্বোক্ত আদেশ বাতিল করে পরবর্তী সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখবেন তবে এরূপ বাতিল করণ সাপেক্ষে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(১) ধারা অনুসারে প্রদত্ত আদেশ চুড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(৫) ধারা)। 

 

আইনসংগতভাবে উচ্ছেদ না হওয় পর্যন্ত দখলঃ  

ম্যাজিষ্ট্রেট যদি সিদ্ধান্ত নেন যে, পক্ষসমূহের মধ্যে একপক্ষ বিরোধীয় বিষয় বস্তুতে দখলকার ছিলেন তৎক্ষেত্রে তিনি একটি আদেশ দ্বারা উক্ত পক্ষকে আইনানুসারে যথাযথভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ দখলের প্রতি সকল প্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি নিষেধ করবেন। তিনি জোর পূর্বক এবং বে-আইনীভাবে দখলচ্যুত পক্ষকে দখল প্রত্যার্পণ করতে পারেন। 

 

মৃত্যুর কারণে আইনানুগ প্রতিনিধিঃ 

এরূপ কোনো কার্যক্রমের কোনো পক্ষ মারা গেলে ম্যাজিষ্ট্রেট তার পক্ষের আইনানুগ প্রতিনিধিকে কার্যক্রমে পক্ষ করতে পারবেন এবং অনুসন্ধান কার্য চালিয়ে যাবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(৭) ধারা)। 

 

বিরোধীয় জমির ফসল বিক্রীর আদেশঃ 

এরূপ কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে ম্যাজিষ্ট্রেট যদি মনে করেন যে, বিরোধীয় জমির ফসল বা অন্য কোনো উৎপন্ন দ্রব্য দ্রুত পচনশীল, তাহলে তিনি উক্ত সম্পত্তির যথাযথ হেফাজত বা বিক্রয়ের জন্য আদেশ দিতে পারবেন এবং অনুসন্ধান শেষে উক্ত সম্পত্তি বা এর বিক্রয় লব্দ অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য যথাযথ আদেশ প্রদান করতে পারবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(৮) ধারা)।  

 

সাক্ষী হাজির করার নির্দেশঃ 

এরূপ কার্যক্রমের যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো পক্ষের আবেদনক্রমে কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির হওয়ার বা কোনো দলিল বা সংশ্লিষ্ট বস্তু আদালতে হাজির করার নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(৯) ধারা)।  

 

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে তা ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুসারে কার্যক্রম করার ক্ষমতা ব্যহত করবে না (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(১০) ধারা)। 

 

বিরোধীয় বিষয় ক্রোক করার ক্ষমতাঃ 

ম্যাজিষ্ট্রেট যদি স্থির হন যে, পক্ষসমূহের কেউই তখন বিরোধীয় সম্পত্তিতে দখলকার ছিলো না বা দখল সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে না পারলে উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দখল পাওয়ার অধিকারী ব্যক্তি সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তিনি তা ক্রোক করে রাখতে পারেন। তবে শর্ত থাকে যে, মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট অথবা ক্রোককারী ম্যাজিষ্ট্রেট যদি সন্তুষ্ট হন যে, বিরোধীয় বিষয় সম্পর্কে আর শান্তি ভংগের আশংকা নেই তাহলে যে কোনো সময় ক্রোক প্রত্যাহার করতে পারেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৬(১) ধারা)। 

 

রিসিভার নিয়োগঃ 

 ম্যাজিষ্ট্রেট বিরোধীয় জমি ক্রোক করে তা তত্বাবধানের জন্য একজন রিসিভার নিয়োগ করতে পারবেন (ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৬(২) ধারা)। 

 

উচ্চতর আদালতের সিদ্ধন্ত সমূহঃ 

(১) যেক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট একপক্ষকে কিছু জমির দখলে আছে বলে প্রমাণ পান যা দাবীকৃত দাগের একটি অংশ সেক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট তার চুড়ান্ত আদেশে দখলীকৃত অংশের সীমানা উল্লেখ করে দিবেন (১৪ সিডব্লিউএন ৯৮)।

(২) অত্র ধারার (১) উপধারানুযায়ী আদেশ দিতে হলে দীর্ঘায়ীত তদন্তের প্রয়োজন নেই। ম্যাজিষ্ট্রেট যদি পুলিশ প্রতিবেদন অথবা অন্য কোনো তথ্যের ভিত্তিতে বিরোধীয় জমি বা জলাশয় নিয়ে পক্ষগণের মধ্যে শান্তিভংগের কারণ ঘটতে পারে বলে সন্তুষ্ট হন তাহলে অযথা বিলম্ব না করে প্রথামিক আদেশ দিবেন এবং ম্যাজিষ্ট্রেট যদি বিষয়টিকে জরুরী বলে মনে করেন তাহলে বিরোধীয় বিষয়বস্তু ক্রোক করে রিসিভার নিয়োগ করবেন (এআইআর ১৯৪০ সিন্ধু ৩৩(৩৭)।  

(৩) যদি জমির মালিক আদালতের এলাকার মধ্যে বসবাস না করে তবে তার অনুপস্থিতিতে তার আম-মোক্তারের মাধ্যনে যদি অত্র ধারার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় তবে তা বে-আইনী হবে না (১৯৭০ পিসিআরএলজে ৬৭৭)।

(৪) সরকারের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না (এআইআর ১৯৫৭ উড়িষ্যা ৮০)।

(৫) অত্র ধারার কার্যক্রমে কোনো অপরাধের বিচার হয় না, উহার দ্বারা কেবল একটা বিরোধ নিস্পত্তি হয়। সুতরাং পক্ষগণকে আদালতে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। ম্যাজিষ্ট্রেট অত্র ধারায় কোনো পক্ষকে হাজির হওয়ার জন্য পরোয়ানা প্রাদান করতে পারেন না (৫ সিডব্লিউএন ৭১)।

(৬) অত্র ধারার আদেশে পক্ষগণের যৌথ দখল ঘোষণা করা যায় না (১৫ সিআরএলজে ৫৭২)।

(৭) জলাশয়ের নিম্নের ভূমি সম্পর্কে আদেশের তারিখের দুমাস পূর্বে কোন পক্ষ দখলে ছিলো তা নির্ণয় করা সম্ভবপর না হলে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৬ ধারায় আদেশ দিয়ে তা ক্রোক করে রাখতে পারবেন (২০ সিডব্লিউএন ১০১৪)। 

(৮) অত্র ধারায় ক্রোকাদেশের ফলে কোনো পক্ষ দখলচ্যুত হলে সে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারায় দখল ফেরৎ পাওয়ার জন্য মামলা করতে পারে না (৭ সিআরএলজে ৫৪৭ ডিবি)। 

(৯) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার দরখাস্তের উপর ম্যাজিষ্ট্রেট নিজে সন্তুষ্ট হয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করে তা বিচারের জন্য অন্য কোনো ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট স্থানান্তরিত করতে পারেন অথবা দরখাস্তের উপর কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করে ম্যাজিষ্ট্রেট দরখাস্তটি অন্য ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট আইনসংগতভাবে নিস্পত্তি করার জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন (৭ ডিএলআর পৃষ্ঠা ৯৭)।

(১০) এ ধারার আদেশে বিক্ষুব্ধ পক্ষ যদি অন্যায়ভাবে বা জোরপূর্বক বিরোধীয় জমি চাষ করে তবে দন্ডবিধির ১৮৮ ধারায় তাকে দন্ড দেয়া যাবে (এআইআর ১১৩৯ পাটনা ৬১১, ৬১৮)।  

(১১) কোনো পক্ষ হাজির হতে বা লিখিত বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হলে দখলের বিষয়ে তদন্ত এবং সাক্ষ্য গ্রহণ না করে অপর পক্ষের লিখিত বিবৃতির ভিত্তিতে কোনো আদেশ দেয়া যায় না (১২ সিডব্লিউএন ৭৭১)। 

(১২) অত্র ধারার অনুসন্ধান কার্যক্রমের সময় ম্যাজিষ্ট্রেট কেবল প্রাথমিক আদেশের তারিখে কে দখলে ছিলো তাই দেখবেন, স্বত্ব সম্বন্ধে বিবেচনা করবেন না (পিএলডি ১৬৯৪ লাহোর ৯)।

(১৩) দেওয়ানী আদালত বিরোধীয় সম্পত্তিতে দখল সংক্রান্তে পূর্বে আদেশ প্রদান করে থাকলে উক্ত বিষয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবেন না (২৯ ডিএলআর ৩৮৬)। 

(১৪) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার কার্যক্রম পরিচালনাকালে কেবল উভয় পক্ষের অনুপস্থিতিতে কার্যক্রম বাদ দেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে না (এআইআর ১৯৬৫ পাটনা ৪৬৯)। 

(১৫) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(১) ধারায় ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক প্রদত্ত আদেশে সন্তুষ্টির কারণ বর্ণিত না হলে তা বে-আইনী হবে না যদি সন্তুষ্টির পক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্যাদী নথিতে থাকে (১৩ ডিএলআর (এসসি)১৩৮)।

(১৬) হাইকোর্ট বা দায়রা জজ ম্যাজিষ্ট্রেটকে অত্র ধারায় কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য আদেশ প্রদান করতে পারেন না। ম্যাজিষ্ট্রেট নিজ বিবেচনায় অত্র ধারায় কার্যক্রম গ্রহণ করবেন কিনা এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট হবেন (আইএলআর ৩০ ক্যাল-১১২)। 

(১৭) যে পক্ষের বিরুদ্ধে একতরফা আদেশ দেওয়া হয়েছে সেপক্ষ যদি ম্যাজিষ্ট্রেটকে এ মর্মে সন্তুষ্ট করতে পারেন যে, তার উপর কোনো নোটিশ জারী হয়নি তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট মামলার পুনরায় শুনানী গ্রহণ করবেন (২৪ সিডব্লিউএন ৯০২)। 

(১৮) পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ করতে ম্যাজিষ্ট্রেট কোনোভাবেই বাধ্য নন। ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ প্রতিবেদনের উপর সন্তুষ্ট না হইয়ে নিজ বিবেচনায় কাজ করতে পারেন। কিন্তু এরূপ ক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিশ প্রতিবেদনের মতামতের চেয়ে বাদীর লিখিত বিবৃতিকে প্রধান্য দিলে ম্যাজিষ্ট্রেট আদেশে তার কারণ ব্যাখ্যা করবেন (পিএলডি ১৯৬৫ লাহোর ৩১২)।

(১৯) পুলিশ প্রতিবেদন সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় না যদিও অত্র ধারার কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য তা যথেষ্ট হতে পারে (১৬ ডব্লিউআর ১৭)। 

(২০) যদি দেখা যায় যে, একপক্ষ বিরোধীয় জমিটির দখলে আছে এবং অপরপক্ষ উহাতে অনধিকারভাবে প্রবেশ করার চেষ্টায় রত আছে সেক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় কার্যক্রম গ্রহণ করা যায় না। অনুরূপ ক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করে অপর পক্ষকে বারিত করবেন (২১ সিআরএলজে ৬৪৬)। 

(২১) শান্তিভংগের আশংকা দেখা দিলে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫(১) ধারার অধীন প্রাথমিক আদেশ প্রদান করবেন এবং ১৪৫(৪) ধারাধীন ক্রোকাদেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রাথমিক আদেশ বলবৎ থাকবে। যদি ম্যাজিষ্ট্রেট ১৪৫(৪) ধারাধীন তদন্ত করে বুঝতে পারেন যে, প্রাথমিক আদেশ প্রদানের তারিখ কোনো পক্ষই দখলে ছিলো না বা প্রাথমিক আদেশ প্রদানের দিন কোন পক্ষ দখলে ছিলো তা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হন তখন তিনি ১৪৬(১) ধারাধীন নালিশী ভূমি ক্রোকাবদ্ধ করার আদেশ দিবেন। 

(২২) উপরোক্তরূপ দখল সম্পর্কে না-সূচক সিদ্ধান্ত ব্যতীত ১৪৬(১) ধারায় ক্রোকাদেশ এবং ১৪৬(২) ধারা অনুসারে রিসিভার নিয়োগের আদেশ দেয়া যায় না (১ বিএসসিডি ১০৩ আদম আলী সরকার বনাম……রাষ্ট্র)। 

(২৩) ম্যাজিষ্ট্রেটকে ঠিক করতে হবে প্রাথমিক আদেশ প্রদানের সময় কে দখলে ছিলো। ১৪৫(৪) উপ-ধারা  অনুসারে এরূপ  প্রাথমিক আদেশ প্রদানের দুই মাসের মধ্যে বেদখল হয়েছে, তাহলে মনে করতে হবে সে ঐ তারিখে নালিশী ভূমিতে দখলে ছিলো। যদি দেখা যায় যে মামলা দায়েরের তারিখ এবং প্রাথমিক আদেশ প্রদানের তারিখের মধ্যে নালিশী ভূমি প্রথম পক্ষের দখলে ছিলোনা অথবা যদি দেখা যায় যে, প্রাথমিক আদেশ প্রদানের দুই মাস পূর্ব হতে প্রথম পক্ষের দখল না থাকে তবে ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ ১৪৫(৪) ধারা অনুসারে গ্রহণীয় নহে (১ বিএসসিডি ১০২ মোঃ আব্দুর রহমান বনাম হারুন প্রামানিক)।

(২৪) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে সম্পত্তি ক্রোক করে যার তত্ত্বাবধানে রাখা হয় তিনি আদালতের প্রতিনিধি এবং আদালতের নির্দেশানুসারে কাজ করেন (২০ ডিএলআর ২২)। 

(২৫) ম্যাজিষ্ট্রেট যদি মামলাটিকে জরুরী বলে বিবেচনা করেন তাহলে ১৪৫(৩) ধারার অধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত তিনি বিরোধীয় জমি ক্রোক করতে পারেন (৩৬ ডিএলআর ১৪১)। 

(২৬) বিরোধের বিষয়টি যদি ইতিমধ্যেই দেওয়ানী আদালতে উত্থাপিত হয় এবং দেওয়ানী আদালত দখল নির্ণয় করে আদেশ প্রদান করে অথবা দখলের ডিক্রী দিয়ে থাকেন অথবা ডিক্রী হোল্ডারের দখলের হস্তক্ষেপ বারিত করে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করে থাকেন তাহলে ম্যাজিষ্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন না। (৩১ ডিএলআর ৪১ এডি)। 

(২৭) প্রকৃত দখল বলতে একচেটিয়া দখলকে বুঝায়। ১৪৫ ধারার উদ্দেশ্য হলো জনশান্তি রক্ষা করা। যেপক্ষ দখলে থাকে আইন তাকেই রক্ষা করে (৩০ ডিএলআর ১৯৯)।  

(২৮) ম্যাজিষ্ট্রেট যদি মামলাটি জরুরী বলে বিবেচনা করেন তাহলে এধারার অধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত তিনি বিরোধীয় জমি ক্রোক করতে পারেন (৩৬ ডিএলআর ১৪১)। 

(২৯) উভয় পক্ষের দখল পরিদৃষ্ট হলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার প্রসিডিংস যথোপযুক্ত হবে না (৭ বিসসিআর ৩১৯)।

(৩০) কোনো পক্ষের অনুকুলে দখল পরিদৃষ্ট হলে ১৪৫(৪) ধারা প্রযোজ্য হবে এবং দখল সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে আসা না গেলে ১৪৬ ধারা প্রযোজ্য হবে (৩৬ ডিএলআর ৩১)।  

Google News Google News
Google News এ বিরাট বাজারের সকল পোস্ট পেতে ক্লিক করে ফিডটি ফলো করুন